আজ সকালে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরে এক শক্তিশালী বিস্ফোরণ শহরের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সকাল ৭টা ৩০ মিনিটের কিছু পরে শহরের গুলবার্গ এলাকা কেঁপে ওঠে একটি বিকট বিস্ফোরণে, যার শব্দ কয়েক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত শোনা যায়।
পাকিস্তান পুলিশ এবং র্যাপিড রেসপন্স ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় এবং পুরো এলাকা কর্ডন করে ফেলে। লাহোর সিটি পুলিশ চিফ বিলাল সিদ্দিকী কামিয়ানা এক বিবৃতিতে জানান, “বিস্ফোরণের উৎস ও ধরণ এখনও নিশ্চিত করা যায়নি, তবে এটি পরিকল্পিত নাশকতা কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ৫ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই বিস্ফোরণ এমন সময়ে ঘটল যখন ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আগের চেয়ে অনেক বেশি উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি ও পাল্টা অভিযানের ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলেছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কর্ণেল (অব.) বিক্রম সিং বলেন, “লাহোরে এই বিস্ফোরণ কেবল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। এটি যদি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত হয়, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।”
অন্যদিকে পাকিস্তানি বিশ্লেষক হাফিজ আখতার দাবি করেন, “এই ধরণের বিস্ফোরণ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা বা জঙ্গি তৎপরতার ইঙ্গিতও হতে পারে। সরকারকে অবশ্যই স্বচ্ছ তদন্ত করতে হবে যাতে কোন পক্ষ দায় চাপিয়ে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে না করে।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঘটনার প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা এই ঘটনাটি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সমস্ত পক্ষকে শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা হ্রাসের পরামর্শ দিচ্ছি।”
লাহোর শহর জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সব প্রধান প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ভবন এবং জনবহুল স্থানগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানা উল্লাহ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এই ঘটনার পেছনে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আমাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।”